সৈকতে যত্রতত্র ধুমপান, বিড়ম্বনায় পর্যটকরা

মাহমুদ আশরাফ :

শহুরে জীবন থেকে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে কক্সবাজার সৈকতে এসেছেন পারভিন সুলতানা। গত রাতেই দুই সন্তানকে নিয়ে সে তার স্বামীসহ কক্সবাজার এসে পৌঁছান। কিন্তু সকালে সৈকতে এসে বিশুদ্ধ বাতাসে নিঃশ্বাস নেওয়ার স্বাদ মিটে যায় তার।

বেজায় ক্ষেপে গিয়ে তিনি বলছিলেন, সকাল-সকাল বিচে আসছি একটু বিশুদ্ধ বাতাসের আশায়। কিন্তু বিচের চেয়ারে বসেই দেখি আমার পাশের চেয়ারে অবলীলায় ধূমপান করে যাচ্ছে একদল যুবক। আমার সাথে বাচ্চা ছিলো। তাদেরকে একটু দূরে গিয়ে সিগারেট খেতে বললেও তারা সরেনি। শেষে বাধ্য হয়ে আমরাই সরে পড়ি।

এই চিত্র কক্সবাজার সমূদ্র সৈকতের নিত্যদিনকার। বেড়াতে এসে প্রায়ই অধুমপায়ীদের এই বিড়ম্বনায় পড়তে দেখা যায়। সৈকতে তামাকপন্যের স্টল বা দোকান না থাকলেও অনেককে হেঁটে-হেঁটেও সিগারেট ও পান বিক্রি করতে দেখা যায়। এসব ভাসমান তামাক বিক্রেতাদের অধিকাংশই আবার শিশু-কিশোর। ধূমপানের বিরুদ্ধে কক্সবাজারে এ পর্যন্ত অসংখ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও তা পুরোপুরি আশার আলো দেখছে না। সামগ্রিকভাবে জনমনে অসচেতনতায় এর মূল কারণ হিসেবে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশ্বের সব থেকে দীর্ঘ সমূদ্র সৈকত কক্সবাজার সমূদ্র সৈকত। প্রতি বছর নানান ছুটিতে এর বিশালতায় হারাতে আসে লাখ-লাখ পর্যটক। ছুটি ছাড়াও সারা বছরই এখানে নানা বয়সী দর্শনার্থী ও পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই থাকে। এইসব ভ্রমনকারীদের মধ্যে নারী ও শিশুদের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য। যাদের বেশীরভাগই অধূমপায়ী। কিন্ত যত্রতত্র ধূমপানের কারণে সৈকতে বেড়াতে এসে বিশুদ্ধ বাতাসের পরিবর্তে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন তারা। অধিকাংশের দাবি, কক্সবাজার সৈকতে ধূমপানে নিয়ন্ত্রণ আনা উচিত প্রশাসনের।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আব্বাস বলেন, আমি ধূমপান করি না। কেউ আমার সামনে ধূমপান করলেও সহ্য করতে পারি না। এখানে মানুষ আসে আনন্দ করতে। শহরের দূষিত বাতাস থেকে রেহাই পেতে। কিন্তু এখানেও যদি সিগারেটের ধোঁয়া খেতে হয়, তাহলে কোথায় যাবো! আমি মনে করি প্রশাসনের এ বিষয়টাকে গুরুত্ব সহকারে নেওয়া উচিত।

চট্টগ্রামের বেসরকারী ব্যাংক কর্মকর্তা সৌরভ চৌধুরী বলেন, থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের অনেক দেশের জনপ্রিয় সমূদ্র সৈকতে ধূমপান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমনকি অনেক সৈকতে সিগারেটের অবশিষ্টাংশ, প্যাকেট নিক্ষেপের ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকত হিসেবে আমাদের এখানেও এমনটা করা উচিত।

এদিকে কক্সবাজারে ধূমপান ও তামাকপণ্যে নিরুৎসাহিতকরণে বিভিন্ন বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ছাড়াও কক্সবাজার পৌরসভাও বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে আসছে। ২০১৪ সাল থেকে প্রতি বছর পৌরসভার বার্ষিক বাজেটে আর্থিক বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। ২০১৪’তে এই বরাদ্দ ১ লাখ টাকা থাকলেও চলতি অর্থ বছরে তা দেড় লাখ টাকায় উন্নিত করা হয়েছে। যদিও বছরের অর্ধেক সময় পেরিয়ে গেলেও সে বাজেটের বাস্তবায়নের অগ্রগতি হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

কক্সবাজার পৌরসভার বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা শামীম আক্তার বলেন, সমুদ্র সৈকতকে তামাকমুক্ত করা না গেলেও পৌর এলাকার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক এলাকা বা প্রতিষ্ঠানকে তামাকমুক্ত করা হয়েছে। সৈকত তামাকমুক্ত করতে হলে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। প্রতিদিন সৈকতে অসংখ্য বাইরের মানুষ আসেন, এখানে বসবাস করেন। তামাকমুক্তকরণে তাদেরও আন্তরিক ও সজাগ থাকতে হবে।

কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, আমরা আমাদের চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু শতভাগ তামাকমুক্ত কক্সবাজারের জন্য অনেক বেশী জনসচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে। কক্সবাজার পৌরসভা গত বছরে তামাকে নিরুৎসাহিতকরণে বিভিন্ন কার্যক্রমে প্রায় ৬৭ হাজার টাকা ব্যয় করেছে। এ বছর জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন কারণে এ বিষয়টিতে উদ্যোগ গ্রহণে কিছুটা ধীরগতি এসেছে। কিন্তু শীঘ্রই আমরা পুনরায় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবো। সবমিলে আমরা আশা করছি তামাকমুক্তকরণে আমাদের জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।